উপক্রম

যথাবিধি বন্দি কবি, আনন্দে আসরে,
কহে, জোড় করি কর, গৌড় সুভাজনে;—
সেই আমি, ডুবি পূর্বে ভারত-সাগরে,
তুলিল যে তিলোত্তমা-মুকুতা যৌবনে;—
কবি-গুরু বাল্মীকির প্রসাদে তৎপরে,
গম্ভীরে বাজায়ে বীণা, গাইল, কেমনে,
নাশিলা সুমিত্রা-পুত্র, লঙ্কার সমরে,
দেব-দৈত্য-নরাতঙ্ক— রক্ষেন্দ্র-নন্দনে;
কল্পনা দূতীর সাথে ভ্রমি ব্রজ-ধামে
শুনিল যে গোপিনীর হাহাকার ধ্বনি,
(বিরহে বিহ্বলা বালা হারা হয়ে শ্যামে;)—
বিরহ-লেখন পরে লিখিল লেখনী
যার, বীর জায়া-পক্ষে বীর পতি-গ্রামে,
সেই আমি, শুন, যত গৌড়-চূড়ামণি!—

ইতালি, বিখ্যাত দেশ, কাব্যের কানন, 
বহুবিধ পিক যথা গায় মধুস্বরে,
সঙ্গীত-সুধার রস করি বরিষণ, 
বাসন্ত আমোদে আমোদ মন পূরি নিরন্তরে;—
সে দেশে জনম পূর্বে করিলা গ্রহণ 
ফ্রাঞ্চিস্কো পেতরাকা কবি; বাক্‌দেবীর বরে
বড়ই যশস্বী সাধু, কবি-কুল-ধন,
রসনা অমৃতে সিক্ত, স্বর্ণ বীণা করে।
কাব্যের খনিতে পেয়ে এই ক্ষুদ্র মণি,
স্বমন্দিরে প্রদানিলা বাণীর চরণে
কবীন্দ্র: প্রসন্নভাবে গ্রহিলা জননী
(মনোনীত বর দিয়া) এ উপকরণে।
ভারতে ভারতী-পদ উপযুক্ত গণি,
উপহাররূপে আজি অরপি রতনে॥

[১] বঙ্গভাষা

হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;—
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।
কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি।
অনিদ্রায়, নিরাহারে সঁপি কায়, মনঃ,
মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি;—
কেলিনু শৈবালে; ভুলি কমল-কানন!
স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে—
“ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,
এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!”
পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে
মাতৃ-ভাষা-রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে॥

[২] কমলে কামিনী

কমলে কামিনী আমি হেরিনু স্বপনে
কালিদহে। বসি বামা শতদল-দলে
(নিশীথে চন্দ্রিমা যথা সরসীর জলে
মনোহরা।) বাম করে সাপটি হেলনে
গজেশে, গ্রাসিছে তারে উগরি সঘনে 
গুঞ্জরিছে অলিপুঞ্জ অন্ধ পরিমলে,
বহিছে দহের বারি মৃদু কলকলে!—
কার না ভোলে রে মনঃ, এহেন ছলনে!
কবিতা-পঙ্কজ-রবি, শ্রীকবিকঙ্কণ,
ধন্য তুমি বঙ্গভূমে! যশঃ-সুধাদানে
অমর করিলা তোমা অমরকারিণী
বাগ্‌দেবী! ভোগিলা দুখ জীবনে, ব্রাহ্মণ,
এবে কে না পূজে তোমা, মজি তব গানে?—
বঙ্গ-হৃদ-হ্রদে চণ্ডী কমলে কামিনী॥

[৩] অন্নপূর্ণার ঝাঁপি

মোহিনী-রূপসী-বেশে ঝাঁপি কাঁখে করি
পশিছেন, ভবানন্দ, দেখ তব ঘরে
অন্নদা! বহিছে শূন্যে সঙ্গীত-লহরী,
অদৃশ্যে অপ্সরাচয় নাচিছে অম্বরে।–
দেবীর প্রসাদে তোমা রাজপদে বরি,
রাজাসন, রাজছত্র, দিবেন সত্বরে
রাজলক্ষ্মী; ধন-স্রোতে তব ভাগ্যতরি
ভাসিবে অনেক দিন, জননীর বরে।
কিন্তু চিরস্থায়ী অর্থ নহে এ সংসারে;
চঞ্চলা ধনদা রমা, ধনও চঞ্চল;
তবু কি সংশয় তব, জিজ্ঞাসি তোমারে?
তব বংশ-যশঃ-ঝাঁপি–অন্নদামঙ্গল–
যতনে রাখিবে বঙ্গে মনের ভাণ্ডারে,
রাখে যথা সুধামৃতে চন্দ্রের মণ্ডলে।

[৪] কাশীরাম দাস

চন্দ্রচূড়-জটাজালে আছিলা যেমতি
জাহ্নবী, ভারত-রস ঋষি দ্বৈপায়ন,
ঢালি সংস্কৃত-হ্রদে রাখিলা তেমতি; — 
তৃষ্ণায় আকুল বঙ্গ করিত রোদন।
কঠোরে গঙ্গায় পূজি ভগীরথ ব্রতী,
(সুধন্য তাপস ভবে, নর-কুল-ধন! )
সগর-বংশের যথা সাধিলা মুকতি,
পবিত্রিলা আনি মায়ে, এ তিন ভুবন;
সেই রূপে ভাষা-পথ খননি স্ববলে,
ভারত-রসের স্রোতঃ আনিয়াছ তুমি
জুড়াতে গৌড়ের তৃষা সে বিমল জলে। 
নারিবে শোধিতে ধার কভু গৌড়ভূমি।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
হে কাশি, কবীশদলে তুমি পুণ্যবান্॥

[৫] কৃত্তিবাস

জনক জননী তব দিলা শুভ ক্ষণে
কৃত্তিবাস নাম তোমা!— কীর্ত্তির বসতি
সতত তোমার নামে সুবঙ্গ-ভবনে,
কোকিলের কণ্ঠে যথা স্বর, কবিপতি,
নয়নরঞ্জন-রূপ কুসুম-যৌবনে,
রশ্মি মাণিকের দেহে। আপনি ভারতী,
বুঝি কয়ে দিলা নাম নিশার স্বপনে,
পূর্ব্ব-জনমের তব স্মরি হে ভকতি!
পবন-নন্দন হনু, লঙ্ঘি ভীমবলে
সাগর, ঢালিলা যথা রাঘবের কানে
সীতার বারতা-রূপ সঙ্গীত-লহরী;–
তেমতি, যশস্বি, তুমি সুবঙ্গ-মণ্ডলে
গাও গো রামের নাম সুমধুর তানে,
কবি-পিতা বাল্মীকিকে তপে তুষ্ট করি!

[৬] জয়দেব

চল যাই, জয়দেব, গোকুল-ভবনে
তব সঙ্গে, যথা রঙ্গে তমালের তলে
শিখীপুচ্ছ-চূড়া শিরে, পীতধড়া গলে
নাচে শ্যাম, বামে রাধা— সৌদামিনী ঘনে!
না পাই যাদবে যদি, তুমি কুতূহলে
পূরিও নিকুঞ্জরাজী বেণুর স্বননে।
ভুলিবে গোকুল-কুল এ তোমার ছলে,—
নাচিবে শিখিনী সুখে, গাবে পিকগণে,—
বহিবে সমীর ধীরে সুস্বর-লহরী,—
মৃদুতর কলকলে কালিন্দী আপনি
চলিবে। আনন্দে শুনি সে মধুর ধ্বনি,
ধৈরজ ধরি কি রবে ব্রজের সুন্দরী?
মাধবের রব, কবি, ও তব বদনে,
কে আছে ভারতে ভক্ত নাহি ভাবে মনে?

[৭] কালিদাস

কবিতা-নিকুঞ্জে তুমি পিককুল-পতি।
কার গো না মজে মনঃ ও মধুর স্বরে?
শুনিয়াছি লোক-মুখে আপনি ভারতী,
সৃজি মায়াবলে সরঃ বনের ভিতরে,
নব নাগরীর বেশে তুষিলেন বরে
তোমায়; অমৃত রসে রসনা সিকতি,
আপনার স্বর্ণ বীণা অর্পিলা ও করে।–
সত্য কি হে এ কাহিনী, কহ, মহামতি?
মিথ্যা বা কি বল্যে বলি! শৈলেন্দ্র-সদনে,
লভি জন্ম মন্দাকিনী (আনন্দ জগতে!)
নাশেন কলুষ যথা এ তিন ভুবনে;
সঙ্গীত-তরঙ্গ তব উথলি ভারতে
(পুণ্যভূমি!) হে কবীন্দ্র, সুধা-বরিষণে,
দেশ-দেশান্তরে কর্ণ তোষে সেই মতে।

[৮-৯] মেঘদূত

কামী যক্ষ দহি, মেঘ, বিরহ-দহনে,
দূত-পদে বরি পূর্ব্বে, তোমায় সাধিল
বহিতে বারতা তার অলকা-ভবনে,
যথা ক্ষুণ্ণ মনে প্রিয়া শূন্যঘরে ছিল।
কত যে মিনতি কথা কাতরে কহিল
তব পদতলে সে, তা পড়ে কি হে মনে?
জানি আমি, তুষ্ট হয়ে তার সে সাধনে
প্রদানিলা তুমি তারে যা কিছু যাচিল;
তেঁই গো প্রবাসে আজি এই ভিক্ষা করি;–
দাসের বারতা লয়ে যাও শীঘ্রগতি
বিরাজে, হে মেঘরাজ, যথা সে যুবতী,
অধীর এ হিয়া, হায়, যার রূপ স্মরি!
কুসুমের কানে স্বনে মলয় যেমতি
মৃদে, কয়ো তারে, দূত, এ বিরহে মরি!
গরুড়ের বেগে, মেঘ, উড় শুভ ক্ষণে।
সাগরের জলে সুখে দেখিবে, সুমতি,
ইন্দ্র-ধনুঃ-চূড়া শিরে ও শ্যাম মূরতি,
ব্রজে যথা ব্রজরাজ যমুনা-দর্পণে
হেরেন বরাঙ্গ, যাহে মজি ব্রজাঙ্গনে
দেয় জলাঞ্জলি লাজে! যদি রোধে গতি
তোমার, পর্ব্বত-বৃন্দ, মন্দ্রি ভীম স্বনে
বারি-ধারা-রূপ বাণে বিঁধো, মেঘপতি,
তা সকলে, বীর তুমি; কারে ডর রণে?—
এ দূর গমনে যদি হও ক্লান্ত কভু,
কামীর দোহাই দিয়া ডেকো গো পবনে
বহিতে তোমার ভার। শোভিবে, হে প্রভু,
খগেন্দ্রে উপেন্দ্র-সম, তুমি সে বাহনে!—
কৌস্তুভের রূপে পরো— তড়িত-রতনে।

[১০] “বউ কথা কও”

কি দুখে, হে পাখি, তুমি শাখার উপরে
বসি, বউ কথা কও, কও এ কাননে?—
মানিনী ভামিনী কি হে ভামের গুমরে,
ঢাকিয়াছে ঘোমটায় সুচন্দ্র-বদনে?
তেঁই সাধ তারে তুমি মিনতি-বচনে?
তেঁই হে এ কথা-গুলি কহিছ কাতরে?
বড়ই কৌতুক, পাখি, জনমে এ মনে,—
নর-নারী-রঙ্গ কি হে বিহঙ্গিনী করে?
সত্য যদি, তবে শুন, দিতেছি যুকতি;
(শিখাইব শিখেছি যা ঠেকি এ কু-দায়ে)
পবনের বেগে যাও যথায় যুবতী;
“ক্ষম, প্রিয়ে,” এই বলি পড় গিয়া পায়ে!–
কভু দাস, কভু প্রভু, শুন, ক্ষুণ্ণ-মতি,
প্রেম-রাজ্যে রাজাসন থাকে এ উপায়ে।

[১১-১২] পরিচয়

যে দেশে উদয়ি রবি উদয়-অচলে, 
ধরণীর বিম্বাধর চুম্বেন আদরে 
প্রভাতে; যে দেশে গাই, সুমধুর কলে, 
ধাতার প্রশংসা-গীত, বহেন সাগরে 
জাহ্নবী; যে দেশে ভেদি বারিদ-মণ্ডলে 
(তুষারে বপিত বাস উর্দ্দ্ধ কলেবরে,
রজতের উপবীত স্রোতঃ-রূপে গলে,)
শোভেন শৈলেন্দ্র-রাজ, মানঃ-সরোবরে
(স্বচ্ছ দরপণ!) হেরি ভীষণ মূরতি;– 
যে দেশে কুহরে পিক বাসন্ত কাননে;– 
দিনেশে যে দেশে সেবে নলিনী যুবতী;— 
চাঁদের আমোদ যথা কুমুদ-সদনে;–
সে দেশে জনম মম; জননী ভারতী;
তেঁই প্রেম-দাস আমি, ওলো বরাঙ্গনে!
কে না জানে কবি-কুল প্রেম-দাস ভবে,
কুসুমের দাস যথা মারুত্, সুন্দরি,
ভাল যে বাসিব আমি, এ বিষয়ে তবে
এ বৃথা সংশয় কেন? কুসুম-মঞ্জরী
মদনের কুঞ্জে তুই! কভু পিক-রবে
তোর গুণ গায় কবি; কভু রূপ ধরি
অলির, যাচে সে মধু ও কানে গুঞ্জরি,
ব্রজে যথা রসরাজ রাসের পরবে!
কামের নিকুঞ্জ এই! কত যে কি ফলে,
হে রসিক, এ নিকুঞ্জে, ভাবি দেখ মনে!
সরঃ ত্যজি সরোজিনী ফুটিছে এ স্থলে,
কদম্ব, বিম্বিকা, রম্ভা, চম্পকের সনে!
সাপিনীরে হেরি ভয়ে লুকাইছে গলে
কোকিল; কুরঙ্গ গেছে রাখি দু-নয়নে!

[১৩] যশের মন্দির

সুবর্ণ-দেউল আমি দেখিনু স্বপনে
অতি-তুঙ্গ শৃঙ্গ শিরে! সে শৃঙ্গের তলে,
বড় অপ্রশস্ত সিঁড়ি গড়া মায়া-বলে,
বহুবিধ রোধে রুদ্ধ উর্দ্ধগামী জনে!
তবুও উঠিতে তথা— সে দুর্গম স্থলে—
করিছে কঠোর চেষ্টা কষ্ট সহি মনে
বহু প্রাণী। বহু প্রাণী কাঁদিছে বিকেলে,
না পারি লভিতে যত্নে সে রত্ন-ভবনে।
ব্যথিল হৃদয় মোর দেখি তা সবারে।—
শিয়রে দাঁড়ায়ে পরে কহিলা ভারতী,
মৃদু হাসি; “ওরে বাছা, না দিলে শকতি 
আমি, ও দেউলে কার সাধ্য উঠিবারে?
যশের মন্দির ওই; ওথা যার গতি,
অশক্ত আপনি যম ছুঁইতে রে তারে!”

১৪ কবি

কে কবি— কবে কে মোরে? ঘটকালি করি,
শবদে শবদে বিয়া দেয় যেই জন,
সেই কি সে যম-দমী? তার শিরোপরি
শোভে কি অক্ষয় শোভা যশের রতন?
সেই কবি মোর মতে, কল্পনা সুন্দরী
যার মনঃ-কমলেতে পাতেন আসন,
অস্তগামি-ভানু-প্রভা-সদৃশ বিতরি
ভাবের সংসারে তার সুবর্ণ-কিরণ।
আনন্দ, আক্ষেপ ক্রোধ, যার আজ্ঞা মানে
অরণ্যে কুসুম ফোটে যার ইচ্ছা-বলে;
নন্দন-কানন হতে যে সুজন আনে
পারিজাত কুসুমের রম্য পরিমলে;
মরুভূমে— তুষ্ট হয়ে যাহার ধেয়ানে
বহে জলবতী নদী মৃদু কলকলে!

[১৫] দেব-দোল

ওই যে শুনিছ ধ্বনি ও নিকুঞ্জ-বনে,
ভেবো না গুঞ্জরে অলি চুম্বি ফুলাধরে ;
ভেবো না গাইছে পিক কল কুহরণে, 
তুষিতে প্রত্যুষে আজি ঋতু-রাজেশ্বরে! 
দেখ, মীলি, ভক্তজন, ভক্তির নয়নে, 
অধোগামী দেব-গ্রাম উজ্জ্বল-অম্বরে,— 
আসিছেন সবে হেথা—এই দোলাসনে— 
পূজিতে রাখালরাজ—রাধা-মনোহরে! 
স্বর্গীয় বাজনা ওই ! পিককুল কবে, 
কবে বা মধুপ, করে হেন মধু-ধ্বনি?
কিন্নরের বীণা-তান অপ্সরার রবে ! 
আনন্দে কুসুম-সাজ ধরেন ধরণী,— 
নন্দন-কানন-জাত পরিমল ভবে 
বিতরেন বায়ু-ইন্দ্র পবন আপনি !

[১৬] শ্রীপঞ্চমী

নহে দিন দূর, দেবি, যবে ভূভারতে
বিসর্জ্জিবে ভূভারতে, বিস্মৃতির জলে,
ও তব ধবল মূর্ত্তি সুদল কমলে;— 
কিন্তু চিরস্থায়ী পূজা তোমার জগতে! 
মনোরূপ-পদ্ম যিনি রোপিলা কৌশলে 
এ মানব-দেহ-সরে, তার ইচ্ছামতে 
সে কুসুমে বাস তব, যথা মরকতে 
কিম্বা পদ্মরাগে জ্যোতিঃ নিত্য ঝলঝলে! 
কবির হৃদয়-বনে যে ফুল ফুটিবে, 
সে ফুল-অঞ্জলি লোক ও রাঙা চরণে 
পরম-ভকতি-ভাবে চিরকাল দিবে 
দশ দিশে, যত দিন এ মর ভবনে 
মনঃ-পদ্ম ফোটে, পূজা, তুমি, মা, পাইবে!—
কি কাজ মাটির দেহে তবে, সনাতনে?

[১৭] কবিতা

অন্ধ যে, কি রূপ কবে তার চক্ষে ধরে 
নলিনী? রোধিলা বিধি কর্ণ-পথ যার, 
লভে কি সে সুখ কভু বীণার সুস্বরে ? 
কি কাক, কি পিকধ্বনি,—সম-ভাব তার ! 
মনের উদ্যান-মাঝে, কুসুমের সার 
কবিতা-কুসুম-রত্ন! —দয়া করি নরে, 
কবি-মুখ-ব্রহ্ম-লোকে উরি অবতার 
বাণীরূপে বীণাপাণি এ নর-নগরে। – 
দুর্ম্মতি সে জন, যার মনঃ নাহি মজে 
কবিতা-অমৃত-রসে! হায়, সে দুর্ম্মতি, 
পুষ্পাঞ্জলি দিয়া সদা যে জন না ভজে 
ও চরণপদ্ম, পদ্মবাসিনি ভারতি। 
কর পরিমলময় এ হিয়া-সরোজে— 
তুষি যেন বিজ্ঞে, মা গো, এ মোর মিনতি।

[১৮] আশ্বিন মাস

সু-শ্যামাঙ্গ বঙ্গ এবে মহাব্রতে রত। 
এসেছেন ফিরে উমা, বৎসরের পরে, 
মহিষমর্দ্দিনীরূপে ভকতের ঘরে; 
বামে কমকায়া রমা, দক্ষিণে আয়ত-
লোচনা বচনেশ্বরী, স্বর্ণবীণা করে; 
শিখীপৃষ্ঠে শিখীধ্বজ, যাঁর শরে হত
তারক—অসুরশ্রেষ্ঠ; গণ-দল যত, 
তার পতি গণদেব, রাঙা কলেবরে 
করি-শিরঃ; —আদিব্রহ্ম বেদের বচনে । 
এক পদ্মে শতদল৷ শত রূপবতী— 
নক্ষত্রমণ্ডলী যেন একত্রে গগনে!— 
কি আনন্দ! পূর্ব্ব কথা কেন কয়ে, স্মৃতি, 
আনিছ হে বারি-ধারা আজি এ নয়নে?— 
ফলিবে কি মনে পুনঃ সে পূর্ব্ব ভকতি?

[১৯] সায়ংকাল

চেয়ে দেখ, চলিছেন মৃদে অস্তাচলে
দিনেশ, ছড়ায়ে স্বর্ণ, রত্ন রাশি রাশি
আকাশে। কত বা যত্নে কাদম্বিনী আসি 
ধরিতেছে তা সবারে সুনীল আঁচলে! – 
কে না জানে অলঙ্কারে অঙ্গনা বিলাসী? 
অতি-ত্বরা গড়ি ধনী দৈব-মায়া-বলে 
বহুবিধ অলঙ্কার পরিবে লো হাসি,—
কনক-কঙ্কণ হাতে, স্বর্ণ-মালা গলে! 
সাজাইবে গজ, বাজী; পর্ব্বতের শিরে 
সুবর্ণ কিরীট দিবে; বহাবে অম্বরে 
নদস্রোতঃ, উজ্জ্বলিত স্বর্ণবর্ণ নীরে! 
সুবর্ণের গাছ রোপি, শাখার উপরে 
হেমাঙ্গ বিহঙ্গ থোবে। –এ বাজী করি রে 
শুভ ক্ষণে দিনকর কর-দান করে।

[২০] সায়ংকালের তারা

কার সাথে তুলনিবে, লো সুর-সুন্দরি, 
ও রূপের ছটা কবি এ ভব-মণ্ডলে?
আছে কি লো হেন খনি, যার গর্ভে ফলে
রতন তোমার মত, কহ, সহচরি
গোধূলির? কি ফণিনী, যার সু-কবরী 
সাজায় সে তোমাসম মণির উজ্জ্বলে?— 
ক্ষণমাত্র দেখি তোমা নক্ষত্র-মণ্ডলে 
কি হেতু? ভাল কি তোমা বাসে না শর্ব্বরী?
হেরি অপরূপ রূপ বুঝি ক্ষুন্ন মনে 
মানিনী রজনী রাণী, তেঁই অনাদরে 
না দেয় শোভিতে তোমা সখীদল-সনে, 
যবে কেলি করে তারা সুহাস-অম্বরে? 
কিন্তু কি অভাব তব, ওলো বরাঙ্গনে,—
ক্ষণমাত্র দেখি মুখ, চির আঁখি স্মরে!

[২১] নিশা

বসন্তে কুসুম-কুল যথা বনস্থলে, 
চেয়ে দেখ, তারাচয় ফুটিছে গগনে, 
মৃগাক্ষি!— সুহাস-মুখে সরসীর জলে, 
চন্দ্রিমা করিছে কেলি প্রেমানন্দ-মনে। 
কত যে কি কহিতেছে মধুর স্বননে 
পবন— বনের কবি, ফুল্ল ফুল-দলে, 
বুঝিতে কি পার, প্রিয়ে? নারিবে কেমনে, 
প্রেম-ফুলেশ্বরী তুমি প্রমদা-মণ্ডলে? 
এ হৃদয়, দেখ, এবে ওই সরোবরে,— 
চন্দ্রিমার রূপে এতে তোমার মূরতি। 
কাল বলি অবহেলা, প্রেয়সি, যে করে 
নিশায়, আমার মতে সে বড় দুর্ম্মতি। 
হেন সুবাসিত শ্বাস, হাস স্নিগ্ধ করে 
যার, সে কি কভু মন্দ, ওলো রসবতি?

[২২] নিশাকালে নদী-তীরে বটবৃক্ষতলে শিব-মন্দির

রাজসূয়-যজ্ঞে যথা রাজাদল চলে 
রতন-মুকুট শিরে; আসিছে সঘনে 
অগণ্য জোনাকীব্রজ এই তরুতলে 
পূজিতে রজনী-যোগে বৃষভ-বাহনে। 
ধূপরূপ পরিমল অদূর কাননে 
পেয়ে, বহিতেছে তাহে হেথা কুতূহলে 
মলয়; কৌমুদী, দেখ, রজত-চরণে 
বীচী-রব-রূপ পরি নূপুর, চঞ্চলে 
নাচিছে; আশ্চর্য্য-রূপ এই তরু-পতি 
উচ্চারিছে বীজমন্ত্র। নীরবে অম্বরে, 
তারাদলে তারানাথ করেন প্রণতি 
(বোধ হয়) আরাধিয়া দেবেশ শঙ্করে! 
তুমিও, লো কল্লোলিনি, মহাব্রতে ব্রতী,— 
সাজায়েছ, দিব্য সাজে, বর কলেবরে।

[২৩] ছায়া-পথ

কহ মোরে, শশিপ্রিয়ে, কহ, কৃপা করি,
কার হেতু নিত্য তুমি সাজাও গগনে,
এ পথ,—উজ্জ্বল কোটি মণির কিরণে?
এ সুপথ দিয়া কি গো ইন্দ্রাণী সুন্দরী;
আনন্দে ভেটিতে যান নন্দন-সদনে 
মহেন্দ্রে,—সঙ্গেতে শত বরাঙ্গী অপ্সরী,
মলিনি ক্ষণেক কাল চারু তারা-গণে—
সৌন্দর্য্যে?—এ কথা দাসে কহ, বিভাবরি। 
রাণী তুমি; নীচ আমি; তেঁই ভয় করে,
অনুচিত বিবেচনা পার করিবারে
আলাপ আমার সাথে; পবন-কিঙ্করে,—
ফুল-কুল সহ কথা কহ দিয়া যারে,
দেও কয়ে; কহিবে সে কানে, মৃদু স্বরে,
যা কিছু ইচ্ছহ, দেবি, কহিতে আমারে!

[২৪] কুসুমে কীট

কি পাপে, কহ তা মোরে, লো বন-সুন্দরি,
কোমল হৃদয়ে তব পশিল,—কি পাপে— 
এ বিষম যমদূত? কাঁদে মনে করি
পরাণ যাতনা তব; কত যে কি তাপে
পোড়ায় দুরন্ত তোমা, বিষদন্তে হরি
বিরাম দিবস নিশি! ‌মৃদে কি বিলাপে
এ তোমার দুখ দেখি সখী মধুকরী,
উড়ি পড়ি তব গলে যবে লো সে কাঁপে? 
বিষাদে মলয় কি লো, কহ, সুবদনে,
নিশ্বাসে তোমার ক্লেশে, যবে লো সে আসে
যাচিতে তোমার কাছে পরিমল-ধনে?
কানন-চন্দ্রিমা তুমি কেন রাহু-গ্রাসে?
মনস্তাপ-রূপে রিপু, হায়, পাপ-মনে,
এই রূপে, রূপবতি, নিত্য সুখ নাশে!

[২৫] বটবৃক্ষ

দেব-অবতার ভাবি বন্দে যে তোমারে,
নাহি চাহে মনঃ মোর তাহে নিন্দা করি, 
তরুরাজ! প্রত্যক্ষতঃ ভারত-সংসারে, 
বিধির করুণা তুমি তরু-রূপ ধরি! 
জীবকুল-হিতৈষিণী, ছায়া সু-সুন্দরী, 
তোমার দুহিতা, সাধু! যবে বসুধারে 
দগধে আগ্নেয় তাপে, দয়া পরিহরি, 
মিহির, আকুল জীব বাঁচে পূজি তাঁরে। 
শত-পত্রময় মঞ্চে, তোমার সদনে, 
খেচর—অতিথি-ব্রজ, বিরাজে সতত, 
পদ্মরাগ ফলপুঞ্জে ভুঞ্জি হৃষ্ট-মনে;—
মৃদু-ভাষে মিষ্টালাপ কর তুমি কত, 
মিষ্টালাপি, দেহ-দাহ শীতলি যতনে! 
দেব নহ; কিন্তু গুণে দেবতার মত।

[২৬] সৃষ্টিকর্ত্তা

কে সৃজিলা এ সুবিশ্বে, জিজ্ঞাসিব কারে 
এ রহস্য কথা, বিশ্বে, আমি মন্দমতি? 
পার যদি, তুমি দাসে কহ, বসুমতি;— 
দেহ মহা-দীক্ষা, দেবি, ভিক্ষা চিনিবারে 
তাঁহায়, প্রসাদে যাঁর তুমি, রূপবতী,—
ভ্রম অসম্ভ্রমে শূন্যে! কহ, হে আমারে, 
কে তিনি, দিনেশ রবি, করি এ মিনতি, 
যাঁর আদি জ্যোতিঃ, হেম-আলোক সঞ্চারে 
তোমার বদন, দেব, প্রত্যহ উজ্জ্বলে?—
অধম চিনিতে চাহে সে পরম জনে, 
যাঁহার প্রসাদে তুমি নক্ষত্র-মণ্ডলে 
কর কেলি নিশাকালে রজত-আসনে, 
নিশানাথ। নদকুল, কহ, কল কলে, 
কিম্বা তুমি, অম্বুপতি, গম্ভীর স্বননে।

[২৭] সূর্য্য

এখনও আছে লোক দেশ দেশান্তরে
দেব ভাবি পূজে তোমা, রবি দিনমণি,
দেখি তোমা দিবামুখে উদয়-শিখরে,
লুটায়ে ধরণীতলে, করে স্তুতি-ধ্বনি;—
আশ্চর্য্যের কথা, সূর্য্য, এ না মনে গণি।
অসীম মহিমা তব, যখন প্রখরে
শোভ তুমি, বিভাবসু, মধ্যাহ্নে অম্বরে
সমুজ্জ্বল করজালে আবরি মেদিনী।
অসীম মহিমা তব, অসীম শকতি, 
হেম-জ্যোতিঃ-দাতা তুমি চন্দ্র-গ্রহ-দলে; 
উর্ব্বরা তোমার বীর্য্যে সতী বসুমতী;
বারিদ, প্রসাদে তব, সদা পূর্ণ জলে;—
কিন্তু কি মহিমা তাঁর, কহ, দিনপতি,
কোটি রবি শোভে নিত্য যাঁর পদতলে!

[২৮] সীতাদেবী

অনুক্ষণ মনে মোর পড়ে তব কথা,
বৈদেহি! কখন দেখি, মুদিত নয়নে,
একাকিনী তুমি, সতি, অশোক কাননে,
চারি দিকে চেড়ীবৃন্দ, চন্দ্রকলা যথা
আচ্ছন্ন মেঘের মাঝে! হায়, বহে বৃথা
পদ্মাক্ষি, ও চক্ষুঃ হতে অশ্রু-ধারা ঘনে!
কোথা দাশরথি শূর—কোথা মহারথী
দেবর লক্ষ্মণ, দেবি, চিরজয়ী রণে?
কি সাহসে, সুকেশিনি, হরিল তোমারে
রাক্ষস? জানেনা মূঢ়, কি ঘটিবে পরে!
রাহু-গ্রাষ্প[?]-রূপ ধরি বিপত্তি আঁধারে
জ্ঞান-রবি, যবে বিধি বিড়ম্বন করে!
মজিবে এ রক্ষোবংশ, খ্যাত ত্রিসংসারে,
ভূকম্পনে দ্বীপ যথা অতল সাগরে!

[২৯] মহাভারত

কল্পনা-বাহনে সুখে করি আরোহণ, 
উতরিনু, যথা বসি বদরীর তলে,
করে বীণা, গাইছেন গীত কুতূহলে
সত্যবতী-সুত কবি, —ঋষিকুল-ধন!
শুনিনু গম্ভীর ধ্বনি; উন্মীলি নয়ন
দেখিনু কৌরবেশ্বরে, মত্ত বাহুবলে;
দেখিনু পবন-পুত্রে, ঝড় যথা চলে
হুঙ্কারে! আইলা কর্ণ— সূর্য্যের নন্দন—
তেজস্বী। উজ্জ্বলি যথা ছোটে অনম্বরে
নক্ষত্র, আইলা ক্ষেত্রে পার্থ মহামতি,
আলো করি দশদিশ, ধরি বাম করে 
গাণ্ডীব— প্রচণ্ড-দণ্ড-দাতা রিপু প্রতি।
তরাসে আকুল হৈনু এ কাল সমরে,
দ্বাপরে গোগৃহ-রণে উত্তর যেমতি।

[৩০] নন্দনকানন

লও দাসে, হে ভারতি, নন্দন-কাননে,
যথা ফোটে পারিজাত; যথায় উর্ব্বশী,—
কামের আকাশে বামা চির-পূর্ণ-শশী,—
নাচে করতালি দিয়া বীণার স্বননে;
যথা রম্ভা, তিলোত্তমা, অলকা রূপসী
মোহে মনঃ সুমধুর স্বর বরিষণে,—
মন্দাকিনী বাহিনীর স্বর্ণ তীরে বসি,
মিশায়ে সু-কণ্ঠ-রব বীচীর বচনে!
যথায় শিশিরের বিন্দু ফুল্লফুল-দলে ।
সদা সদ্যঃ; যথা অলি সতত গুঞ্জরে;
বহে যথা সমীরণ বহি পরিমলে;
বসি যথা শাখা-মুখে কোকিল কুহরে;
লও দাসে; আঁখি দিয়া দেখি তব বলে
ভাব-পটে কল্পনা যা সদা চিত্র করে।

[৩১] সরস্বতী

তপনের তাপে তাপি পথিক যেমতি
পড়ে গিয়া দড়ে রড়ে ছায়ার চরণে;
তৃষাতুর জন যথা হেরি জলবতী
নদীরে, তাহার পানে ধায় ব্যগ্র মনে
পিপাসা-নাশের আশে; এ দাস তেমতি,
জ্বলে যবে প্রাণ তার দুঃখের জ্বলনে,
ধরে রাঙা পা দুখানি, দেবি সরস্বতি!—
মার কোল-সম, মা গো, এ তিন ভুবনে
আছে কি আশ্ৰম আর? নয়নের জলে
ভাসে শিশু যবে, কে সান্ত্বনে তারে?
কে মোচে আঁখির জল অমনি আঁচলে
কে তার মনের খেদ নিবারিতে পারে,
মধুমাখা কথা কয়ে, স্নেহের কৌশলে?—
এই ভাবি, কৃপাময়ি, ভাবি গো তোমারে।

[৩০] কবতক্ষ-নদ

সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে।
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে;
সতত (যেমতি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া-যন্ত্ৰধ্বনি) তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে!—
বহু-দেশে দেখিয়াছি বহু-নদ-দলে,
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্ম-ভূমি-স্তনে।
আর কি হে হবে দেখা?—যত দিন যাবে,
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে
বারি-রূপ কর তুমি; এ মিনতি, গাবে
বঙ্গজ-জনের কানে, সখে, সখা-রীতে
নাম তার, এ প্রবাসে মজি প্রেম-ভাবে
লইছে যে তব নাম বঙ্গের সঙ্গীতে!

[৩৩] ঈশ্বরী পাটনী।

“সেই ঘাটে খেয়া দেয় ঈশ্বরী পাটনী।” —অন্নদামঙ্গল।

কে তোর তরিতে বসি, ঈশ্বরী পাটনি?
ছলিতে তোরে রে যদি কামিনী কমলে,—
কোথা করী, বাম করে ধরি যারে বলে,
উগরি, গ্রাসিল পুনঃ পূৰ্ব্বে সুবদনী?
রূপের খনিতে আর আছে কি রে মণি
এর সম? চেয়ে দেখ, পদ-ছায়া-ছলে,—
কনক কমল ফুল্ল এ নদীর জলে—
কোন্ দেবতারে পূজি, পেলি এ রমণী?
কাঠের সেঁউতি তোর, পদ-পরশনে
হইতেছে স্বর্ণময়। এ নব যুবতী—
নহে রে সামান্যা নারী, এই লাগে মনে;
বলে বেয়ে নদী-পারে যা রে শীঘ্রগতি।
মেগে নিস্, পার করে, বর-রূপ ধনে
দেখায়ে ভকতি, শোন্, এ মোর যুকতি!

Remaining

Many more remain: see here for raw OCR results.

বসন্তে একটী পাখীর প্রতি
প্রাণ 
কল্পনা
রাশিচক্র
সুভদ্রাহরণ
মধুকর
নদীতীরে প্রাচীন দ্বাদশ শিবমন্দির
ভর্‌সেল্‌স নগৱে রাজপুরী ও উদ্যান
কিরাত-আর্জ্জুনীয়ম্
পরলোক
বঙ্গদেশে এক মান্য বন্ধুর উপলক্ষে 
শ্মশান
করুণ-রস 
সীতা-বনবাসে
বিজয়া-দশমী
কোজাগর-লক্ষ্মীপূজা
বীর-রস
গদা-যুদ্ধ 
গোগৃহ-রণে 
কুরুক্ষেত্রে 
শৃঙ্গার-রস
সুভদ্রা
উর্ব্বশী
রৌদ্র-রস
দুঃশাসন
হিড়িম্বা
উদ্যানে পুষ্করিণী 
নূতন বৎসর
কেউটিয়া সাপ
শ্যামা-পক্ষী
দ্বেষ
যশঃ
ভাষা
সাংসারিক জ্ঞান 
পুরুরবা
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
শনি
সাগরে তরি
সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর 
শিশুপাল
তারা
অর্থ
কবিগুরু দান্তে
পণ্ডিতবর থিওডোর গোল্‌ডষ্টুকর
কবির আল্‌ফ্রেড টেনিসন্
কবিবর ভিতর হাগে
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
সংস্কৃত
রামায়ণ
হরিপর্বতে দ্রৌপদীর মৃত্যু 
ভারত-ভূমি
পৃথিবী
আমরা
শকুন্তলা
বাল্মীকি
শ্রীমন্তের টোপর
কোন এক পুস্তকের ভূমিকা পড়িয়া 
মিত্রাক্ষর
ব্রজ-বৃত্তান্ত
ভূতকাল
অশ
সমাপ্তে